Tuesday 2 May 2017

বিয়ের বেনারসি

কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে অলি এক মনে রিপোর্ট তৈরী করছিল । কাজটা শেষ হলেই বেরিয়ে পড়বে অফিস থেকে, তাই ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে সেও ছুটে চলেছে । আজকের ছুটি নিয়ে আগে থেকেই বসকে জানানো ছিল, কিন্তু ক্লাইন্ট রিপোর্টটার জন্য তাঁকে আসতেই হল অফিসে । সে আর শান্তনু মিলে আজ মুভি আর ডিনারের প্ল্যান করেছে । তার আগে অবশ্য আছে বিয়ের কেনাকাটা । আর দু'মাস পরেই যে ওদের বিয়ে । অথচ এখনও তার কিছুই কেনা হয়নি ।
অলকা মজুমদার আর শান্তনু দে, দুজনেই মা-বাবার একমাত্র সন্তান । বরানগরের গঙ্গাঘাটের কাছে, পাশাপাশি পাড়ায় দুজনের বাড়ি । স্কুলজীবন থেকেই তারা একসাথে থেকেছে, একই কলেজে পড়েছে । চাকরীও করে তারা, যদিও দুজনের কোম্পানি আলাদা । ব্যস্ত জীবনের মধ্যেও তারা নিজেদের জন্য সময় বের করে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে গঙ্গাঘাটে কয়েক মিনিটের জন্য দেখা করে রোজ । শনি-রবি করে কোনো একজনের বাড়িতে দুপুরের লাঞ্চ হয় একসাথে । কিন্তু সামনে বিয়ের অনেক কাজ, এই দু'মাস আর সেভাবে সময় পাবে না তারা । আজ তাই এই প্ল্যানটা করেছে, দুজনে একসাথে একটু বেশী সময় কাটাতে পারবে বলে । ভাবতে-ভাবতেই একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল অলি । অফিসের ঘড়িতে বারোটার ঘণ্টা বেজে উঠতেই আবার কাজে মন দিল । কাজ শেষ হতে বাজল ১:৪৫ । বসের কেবিনে রিপোর্টটা পাঠিয়ে দিয়ে সে বেরোনোর জন্য সব গুছিয়ে তার হ্যান্ডব্যাগে পুরতে লাগল । ফোন চেক করতে গিয়ে দেখল শান্তনুর তেইসটা মিসড কল । এমনিতে অফিসে তার ফোন ভাইব্রেট মোডেই থাকে, কিন্তু আজ কাজ শেষ করার তাড়ায় সেটা সাইলেন্ট রেখেছিল ।
"সন্টাই নিশ্চয় অনেকক্ষণ এসে অপেক্ষা করছে (অলি ভালোবেসে শান্তনুকে সন্টাই বলে), তাই হয়তো এতবার ফোন করেছে । আজ তো সেও নিজের অফিস ছুটি নিয়েছে" ভাবতে-ভাবতে সে শান্তনুকে ফোন করে, "আর দু মিনিট একটু কষ্ট করে অপেক্ষা কর বাবু, আমি এক্ষুনি বেরোচ্ছি । তুই টিকিট কেটে নিয়েছিস তো?"
শান্তনু গম্ভীর গলায় একটু তাড়া দিয়ে বলল, "আগে তুই আয় গুডলুই (শান্তনু ভালোবেসে অলিকে 'গুডলুই' বলে), জরুরী কথা আছে ।"
শান্তনুর গলা শুনে অলি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় । সময়নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে অফিস থেকে ।
মেইন গেটের সামনে শান্তনুকে আনমনা অবস্থায় দেখতে পেয়ে অলি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,"কিরে সন্টাই, অফিস ছুটি চাওয়া নিয়ে কি বস ঝামেলা করেছে?" অলি জানে যে শান্তনুদের বস খুব বদমেজাজি, সবসময় ঝামেলা করে । তাই প্রশ্নটা করল ।
"অফিসে কিছু হয়নি রে গুডলুই, ওখানে সব ঠিক আছে ।" বলতে বলতেই শান্তনুর গলাটা কেমন শুকিয়ে এল । অলি শান্তনুকে জলের বোতল দিয়ে অফিসের পাশের ক্যাফেটেরিয়াটা দেখিয়ে বলল, "চল, ওখানটায় বসে আগে কথা বলেনি ।"
ক্যাফেটেরিয়াতে গিয়ে শান্তনু অলিকে বলল, "তোর চাঁদজেঠুর কথা মনে আছে?"
"তা আবার থাকবে না? কিন্তু এরকম কেন জিজ্ঞেস করলি?", অবাক হয়ে অলি জিজ্ঞেস করে ।
শান্তনু বলল, "আজ সকালে জেঠুর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে শুনলাম, নার্সিংহোমে ভর্তি আছেন । মজুমদার কাকু দেখছেন, সবাই ওখানেই আছে । তুই চিন্তা করবি বলে তোকে কিছু জানাতে চায়নি" ।
"কি বলছিস তুই?" চমকে উঠল অলি । শান্তনু বলে চলেছে, অলি দেখতে পাচ্ছে যে ওর ঠোঁটদুটো নড়ছে । কিন্তু সে আর কিছুই শুনতে পাচ্ছে না । কি করে শুনবে, সে যে এখন এই বাস্তব সময় পেরিয়ে চলে গেছে অতীতের সময়ে । এই চাঁদজেঠুকে নিয়ে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে তার জীবনে ।
অলির ছোটোবেলার অনেকটা সময়ই ছিল এই মানুষটাকে জড়িয়ে । অলিদের পাড়াতেই ভাড়ায় থাকতেন মানিকচাঁদ গড়াই, বউ আর তিন ছেলে নিয়ে । অলির কাছে তিনি ছিলেন তার প্রাণের চাঁদজেঠু । অলিও ছিল মানিকবাবুর চোখের নয়নমণি । দু'বেলা অলিকে ভালভাবে না দেখতে পেলে রাতে ঘুম হত না তাঁর । অফিস থেকে ফিরেই মানিকবাবু ব্যাগ রেখে অলিকে কোলে করে সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়ে পড়তেন । আর সঙ্গে হত সারাদিনের জমানো খুঁটিনাটি কথা, ঘন্টার পর ঘন্টা চলত সেই গল্প । অলির মুখের দিকে তাকালে মানিকবাবু তাঁর সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে যেতেন ।
অলিকে মা বলতেনবলতেন, তখন নাকি তার সবে কথা ফুটেছে, আধো-আধো কথা । সেই কথাই খুব মনযোগ দিয়ে শুনতেন তার চাঁদজেঠু । আবার মাঝে মাঝে অলির কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাথা নাড়তেন, হাসতেন, উত্তর দিতেন । অলি আর মানিকবাবুর সেই কথোপকথন শুনে কেউ যদি কখনও জিজ্ঞেস করতেন, "ও কি বলল আপনি বুঝতে পেরেছেন মানিকবাবু?" মানিকবাবুও হেসে উত্তর দিতেন, "তাই কি আর না বুঝি, এটা যে আমাদের 'চাঁদালি ভাষা' গো, চাঁদ আর অলির ভাষা । আর কেউ যাতে আমাদের গোপন কথা বুঝতে না পারে তার জন্যেই তো আমার রানীমা এই ভাষার আবিষ্কার করেছে" । অলিকে ভালবেসে 'রানীমা' বলে ডাকতেন মানিকবাবু । অলির মনে পড়ে, সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চাঁদজেঠু কেমন দিশেহারা হয়ে যেতেন । সকাল-বিকেল এসে অলিকে দেখে যেতেন, ঘুম উড়ে যেত তাঁর । আবার অলির স্কুলে যাওয়া নিয়ে কেমন আনন্দে মেতে উঠেছিলেন তিনি । স্কুলের জুতো, ব্যাগ, জলের বোতল, ছাতা, পেন্সিল বক্স .... এমনকি ইউনিফর্মও তিনি নিয়ে এসেছিলেন ।
অলির বাবা, রণজিৎ মজুমদার, পেশায় ডাক্তার । বেশীরভাগ সময়ই ব্যস্ত থাকতেন রুগী আর নার্সিংহোম নিয়ে । তাই অলির স্কুলের দায়িত্বটা মানিকবাবুর ঘাড়ে গিয়েই পড়েছিল । যদিও 'পড়েছিল' বললে ভুল হবে । তিনি নিজে থেকে যেচেই সেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন । সেই সবদিনের কথা আজও মনে পড়লে অলির ঠোঁটের কোণে হাসির ঝিলিক পড়ে । গাড়ি থাকা সত্ত্বেও মানিকবাবু তাকে কাঁধে বসিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতেন, এক হাতে ব্যাগ আর অন্য হাতে জলের বোতল । আর কাঁধে বসাতেন তাঁর রানীমাকে । অলি কাঁধে বসে ছাতা মাথায় রানীর মত যেত আর মানিকবাবু তখন তাঁর রানীমা-র সওয়ারী হতেন । অলিকে স্কুলে ছেড়ে আসতে চোখ ছলছল করত মানিকবাবুর । স্কুলছুটির পর অলি যখন ছুটে যেত তার চাঁদজেঠুর কাছে, তখন মানিকবাবুও এমনভাবে জড়িয়ে ধরতেন যেন কত বছর দেখতে পাননি তাঁর রানীমাকে ।
জেঠুর সেই আরামকেদারাটার কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেল অলির । হাল্কা সবুজ রঙের, জেঠুর খুব প্রিয় ছিল । কাউকে সেটায় হাত পর্যন্ত দিতে দিতেন না । অথচ তাঁর রানীমার ছিল তাতে অবাধ স্বাধীনতা । অলি সবসময় ওটাতেই বসতে পছন্দ করত । নিজেরই দোষে অলি সেবার পড়ে গিয়েছিল আরামকেদারা থেকে । কিন্তু তার চাঁদজেঠু দোষ দিয়েছিলেন নিজের প্রিয় আরামকেদারাটাকে, বসাই ছেড়ে দিয়েছিলেন তাতে । এমনকি সেটাকে বেচেও দিয়েছিলেন শেষে । নিয়ে এসেছিলেন তাঁর রানীমার জন্য নতুন আরামকেদারা । ওতে অবশ্য নিজে কোনোদিন বসেননি । বা হয়তো এটাকে নিজের প্রিয় আরামকেদারার জায়গাটা কোনওদিন দিতে পারেননি ।
 "সেদিন বুঝিনি, আজ মনে পড়ে সেদিন জেঠুর সেই জলভরা চোখ । খুব কষ্ট হয়েছিল জেঠুর নিজের প্রিয় জিনিসটাকে অন্য কাউকে দিয়ে দিতে", সেই দিনটার কথা ভেবে অলির নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় । "আমি যদি সবসময় ঐ আরামকেদারায় বসায় বায়না না করতাম তাহলেই জেঠুকে ওটা নিজের থেকে আলাদা করতে হত না", অলির যেন গলা ফেটে কান্না বেরিয়ে আসছে ।
একদিন চাঁদজেঠু পরিবার নিয়ে চলে গেলেন নিজেদের দেশের বাড়ী, বর্ধমানে । প্রথমদিকে প্রায় আসতেন তিনি, তাঁর রানীমাকে দেখতে । সঙ্গে নিয়ে আসতেন অলির জেঠীমার হাতে তৈরী মুড়িভাজা, ছোলাভাজা আর মশালা চিঁড়েভাজা । এগুলো অলির ভীষণ প্রিয় ছিল । কিন্তু ধীরে-ধীরে তার চাঁদজেঠুর আসা কমতে থাকে । কিছুটা বয়স বেড়ে যাওয়াতে, কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ার জন্য । কিন্তু হাজার শরীর খারাপ আর কাজের মধ্যেও অলির স্কুলের প্রোগ্রাম কখনও মিস করতেন না তিনি । অলির মনে পড়ল সেই বছরের কথা যে বছর তাঁর চাঁদজেঠু শেষবার এসেছিলেন অলির প্রোগ্রাম দেখতে । সেদিনের কথা মনে পড়লেই লজ্জায় অলির চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে, "ছিঃ, কতটা নিচু মানসিকতা হলে মানুষ এরকম করতে পারে ।" প্রতি বছর প্রোগ্রাম শেষে চাঁদজেঠু অলিকে সঙ্গে করে বাড়ী নিয়ে আসতেন । বাড়িতে সবাই একসাথে খাওয়া-আড্ডা দিয়ে চাঁদজেঠু আবার ফিরে যেতেন তাঁর বাড়ীতে । কিন্তু সে বছর যেন সময় ঠিকই করে রেখেছিল সব কিছু নষ্ট করে দেওয়ার । সে বছর অলির প্রোগ্রাম দেখে তার সঙ্গে দেখা না করেই মানিকবাবু ফিরে যেতে চেয়েছিলেন নিজের বাড়ীতে । অলির বাবা তাঁকে জোর করে বাড়ী নিয়ে এসেছিলেন । অলি এই ব্যাপারটা নিয়ে অভিমান করে চাঁদজেঠুর সাথে প্রথমে কথা বন্ধ করে দিয়েছিল । কিন্তু বারবার করে অলির মা-বাবা যখন বললেন, "যাও অলি, তোমার চাঁদজেঠুর সাথে কথা বল । এত শরীর খারাপ নিয়েও তোমার প্রোগ্রাম দেখতে এসেছেন তিনি । ওভাবে রেগে থাকলে ভালো দেখায় না, জেঠু কষ্ট পাবেন", তখন জেঠুর দিকে এগোতে গিয়েও ছিটকে এসেছিল সে । এতক্ষণ সে খেয়ালই করেনি, জেঠুর শরীরের ক্ষতগুলো । যে টুকু অংশ বেরিয়ে আছে, দেখা যাচ্ছে গলা-পচা ঘা । অলির ভীষণ ঘেন্না হয়েছিল জেঠুর ঐ ঘায়ে দগ্ধ শরীর দেখে । জেঠু হয়ত আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন এরকম পরিস্থিতি হবে । তাই তো প্রোগ্রাম দেখেই ফিরে যেতে চেয়েছিলেন । অলির বাবা মানিকবাবুর ঘাগুলো দেখে ওষুধ লিখে দিচ্ছিলেন । বাবাকে ওভাবে জেঠুর গায়ে হাত দিতে দেখে অলির খুব অসুবিধে হচ্ছিল । আড়ালে সে বাবাকে বলেছিল, "তুমি আর জেঠুকে ছোঁবে না .... ইস, কি নোংরা হয়ে আছে জেঠুর শরীরটা" । হয়তো জেঠু শুনতে পেয়েছিলেন সে কথা । তাইতো মা-বাবার অনেক বলা সত্ত্বেও লজ্জায় সেদিন দুপুরের খাবার না খেয়েই তিনি চলে গিয়েছিলেন । বাবা-মা সেদিন খুব বকেছিলেন অলিকে । সেদিন অলি ভুলে গিয়েছিল, তার হামের সময় এই চাঁদজেঠু কিন্তু তাকে কখনো দূরে সরিয়ে দেননি । দরকারে অ-দরকারে সবসময় অলির সঙ্গে থেকেছেন । লজ্জা আর গ্লানিবোধে অলির দমবন্ধ হয়ে আসছিল । সেইদিনের পর তার চাঁদজেঠু আর কোনওদিন আসেনি তার সামনে । অলি বাবার কাছে শুনেছিল যে চাঁদজেঠু তার বাবার কাছে আসতেন চিকিৎসার জন্য । কিন্তু অলি কোনোদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যেত না । মানিকবাবুও নিজের ওই ক্ষত শরীর আর তার থেকেও বেশী ক্ষত মন নিয়ে অলির সামনে যেতেন না ।
"শরীরের ক্ষতগুলো হয়তো কোনওদিন সেরে যাবে । কিন্তু মনের যে ক্ষতটা আমি দিয়েছি সেটা কি আর সারবে কখনও?", এই ভেবে চোখের জল মুছে অলি শান্তনুকে বলল, "আমাকে ওখানে নিয়ে যেতে পারবি সন্টাই?"
শান্তনু কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই অলি আবার বলে উঠল, "এক্ষুনি যেতে চাই । নিয়ে যাবি?"
সময়নষ্ট না করে দুজনে মিলে চলল চাঁদজেঠুর কাছে । নিজের অপরাধটা বোঝার পর অলি অনেকবারই ভেবেছিল জেঠুর কাছে ক্ষমা চাইবে । হোক তার জেঠুর শরীর ঘায়ে দগ্ধ, হোক তা ঘেন্নাময় । তাতে অলির আর কিছু এসে যায় না । তাঁকে ফিরিয়ে আনবে নিজের জীবনে, আবার আগের মত করে ।
অলির বাবার চিকিৎসাধীনেই রয়েছেন তাঁর চাঁদজেঠু । সেখানে গিয়ে সে জড়িয়ে ধরল তার চাঁদজেঠুকে ।
"তোমার প্রতি আমি খুব অন্যায় করেছি চাঁদজেঠু, আমায় ক্ষমা করে দাও । যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেব, কিন্তু আবার আগের মত আমার জীবনে ফিরে এস । পারবে না নিজের রানীমাকে একটা সুযোগ দিতে?", কাঁদতে কাঁদতে অলি বলল ।
অলির মাথায় হাত রেখে একটু হেসে মানিকবাবু বললেন, "যা শাস্তি দেব, মাথা পেতে নেবে তো?" ।
"হ্যাঁ, তুমি যা বলবে চাঁদজেঠু", কাঁপাস্বরে অলি বলল ।
মানিকবাবু তখন অলিকে একটা প্যাকেট ধরিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "দেখ তো রানীমা, এটা তোমার পছন্দ হয়েছে কি না?" ।
অলি প্যাকেট খুলে দেখে তাতে একটা শাড়ী । অবাক হয়ে সে মানিকবাবুর দিকে তাকিয়ে দেখল যে তার চাঁদজেঠুর মুখে এক শান্ত, স্নিগ্ধ হাসির ছটা ।
"তোর চাঁদজেঠু কি কখনও তোর ওপর রেগে থাকতে পারে? বিয়ের খবর পেয়েই কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন । এটা বেনারসি । আরও অনেক কিছু আছে", পাশ থেকে অলির মা বললেন ।
মায়ের কথা শুনে অলি আর কিছু বলতে পারে না । তার সব কথা যেন গলার কাছে এসে দলা পাকিয়ে আটকে যাচ্ছে, চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরে পড়ছে অশ্রুধারা । ঝাপসা চোখে শাড়ীটাকে দেখে, সে তার চাঁদজেঠুর বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে বলল, "আমার বিয়ের বেনারসিটা খুব সুন্দর হয়েছে চাঁদজেঠু" ।

No comments:

Post a Comment